কবি আসাদ মান্নান
"আমি কোনো বৈদ্য নই অনবদ্য কবিতা লিখি না
শব্দের সামান্য দাস ইচ্ছে হলে লিখি টুক টাক
গাউস কুতুব যারা উহাদের ভাগ্যে লিখা থাক
খ্যাতির সালসা মধু মদালস রূপসী সখিনা।"
জন্ম ৩ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে চট্রগ্রামের সন্দ্বীপে।
সত্তর দশকের প্রথম সারির অন্যতম শক্তিশালী কবি। তাঁর কাব্যবুননে নিজস্ব ধরণ কৌশল বা রীতি তাঁর স্বকীয় প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। বাংলা কবিতায় তাঁর নিজস্ব বলয় সৃষ্টির বিষয়টা নি:সন্ধেহে একটি মেরুকরণ বলা যেতে পারে। বাংলাভাষার কবি ও কবিতায় তিনি বিশেষ একটা জায়গায় অনবদ্য অবস্থান নিয়ে আছেন, বলতে গেলে ঈর্ষণীয়। কবি আসাদ মান্নান একজন সুপরিচিত এবং সুনন্দিত নাম। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সামাজিক আন্দোলনের তাঁর কবিতা অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছে ।
এ পর্যন্ত ১৪টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু গদ্যও রচনা করছেন। ‘সুন্দর দক্ষিণে থাকে’, ‘হে অন্ধ জলের যাত্রা’, ‘সৈয়দ বংশের ফুল’, ‘ভালোবাসা আগুনের নদী’, ‘ভালোবাসার কবিতা’ প্রভৃতি তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। ১৯৮১ সালে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে শ্রেষ্ঠ তরুণ কবি হিসেবে পরপর দু’বার ‘বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার’, ২০০৭ সালে জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, ২০১২ সালে কবিকুঞ্জ পদক ও সম্মাননাসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন ।
‘বিদেশেী কুত্তার পিঠে বিদেশী শকুন
বেশ্যার ছেলের হাতে ইতিহাস খুন
আগুন লেগেছে তাই যমুনার জলে
আগে আগে হনুমান রাম পিছে চলে
সীতাকে হরণ করে রাক্ষস রাবণ
টুঙ্গিপাড়ায় হবে বঙ্গভবন।”
১৯৭৭ সালের সেই সাড়া জাগানো কবিতার একটি স্তবক। যে কবিতার জন্য শুধূ পূরুষ্কার অর্জন নয়, তরুণ বয়সে বাংলা সাহিত্যে কবিকে প্রতিষ্টিত করতে বড় রকমের সহায়ক ছিল ।
কবিতা
বিজয়ের অবিনাশী জয়ধ্বনি
যদি ভালোবাসা পাই
আমি আর কোথাও যাব না;
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমি যাব-- সবখানে যাব, সবখানে...
হালকা পাতলা স্বপ্ন-টপ্ন, টুকিটাকি সুখ-দুঃখ-প্রেম
দোয়েল রাতের শিষ, রাতজাগা হরিয়াল পূর্ণিমার চাঁদ
জ্যোৎস্নারশৃঙ্খল পায়ে শুয়ে থাকা নদীর ওলান
গভীর আঠালো ঘুমে আচ্ছন্ন স্বদেশ,
যে-দেশে মানুষ অন্ধ হয়ে থাকতে চায়,
ভালোবাসেকীট হয়ে বেঁচে থাকতে--সংকোচ করে না;
মধ্যরাতে এইখানে-- এই ঘাসবনে, তুমি দ্যাখো,
এই ঠাণ্ডাকরতলে
আমি সেই দেশটাকে সযত্নে লুকিয়ে রাখলাম--
আমি আর কোথাও যাব না:
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে, আমি যাব... সবখানে যাব।
যদি ভালোবাসা পাই
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে এই সীমাবদ্ধ দেশ ছেড়ে
আমি চলে যাব অন্য দেশে, অন্য এক বাংলাদেশে
যার কোনও সীমা ও সীমান্ত নেই
যেখানে থাকে না কোনও জাতীয় পতাকা জাতীয় সঙ্গীত আর রাজদণ্ড
যেখানে থাকে না হিংস্র হায়েনার থাবা, গর্ভবতী হরিণীর মর্মভেদী ডাক
যেখানে থাকে না মানুষের জন্ম-পরিচয়, ধর্ম-পরিহাস
সকালে দুপুরে আর অপরাহ্নে যেখানে থাকে না
ক্ষুধার মিছিল
মিছিলে পিতার লাশ
মিছিলে ভাইয়ের লাশ
মিছিলে বোনের লাশ
মিছিলে আমার লাশ
যদি ভালোবাসা পাই
আমি হতে পারি সব উলঙ্গ শিশুর হাফপ্যান্ট
আমি হতে পারি সব ক্ষুধার্ত শিশুর মাতৃদুগ্ধ
যদি ভালোবাসা পাই
আমি হতে পারি সব গৃহহীন মানুষের গৃহ
আমি হতে পারি সব স্নেহহীন মানুষের স্নেহ
যদি ভালোবাসা পাই
আমি হতে পারি সব গন্ধহীন গোলাপের ঘ্রাণ
আমি হতে পারি সব প্রাণহীন উদ্ভিদের প্রাণ
যদি ভালোবাসা পাই
আমি এক সমুদ্র থেকে আর এক সমুদ্রকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে এনে
নিঃশব্দে লুকিয়ে রাখব অন্যএক সমুদ্রের নিচে
যদি ভালোবাসা পাই
আমি এক নারী থেকে আরেক নারীকে পথে ও বিপথে এনে
তরতাজা অন্ধকারে লুকিয়ে রাখবো অন্যএক নারীর ভেতর
কেউ দেখবে না, কেউ জানবে না... টেরও পাবে না...
যদি ভালোবাসা পাই
যুদ্ধে লিপ্ত প্রতিটি ভূখণ্ডে আমি রেখে আসব রবীন্দ্রসঙ্গীত
সাতটি তারার তিমির, শস্যমুগ্ধ কৃষকের হাত
বেলাশেষে ঘরে ফেরা শ্রমিকের রসালো চুম্বন আর জেলেনির ঠোঁট
যদি ভালোবাসা পাই
হোমার ও দান্তের আত্মা থেকে আমি এক মুহূর্তে এনে দেবো
একঝাঁক আশ্চর্য সুন্দর সূর্যোদয়, সহস্র আলোর পাখি;
যদি ভালোবাসা পাই
আমি ঐ পাখির মতো উড়ে যাব
অন্ধকারে নিমজ্জিত যুদ্ধবাজ হাওয়ার তাঁবুতে
যুদ্ধরত সৈনিকের মাথার খোড়লে
শান্তির স্বপক্ষে আমি বারবার উড়ে যাব অষ্টম নরকে।
যদি ভালোবাসা পাই
এ অশান্ত রাজপথে পাড়ায় পাড়ায় নিঃসঙ্গ পার্কের কোণে
খিলিখিলি ভালোবাসা ছড়াতে ছড়াতে
হ্যাঁ হ্যাঁ ছড়াতে ছড়াতে ছড়াতে ছড়াতে... ...
যদি ভালোবাসা পাই
অই আলোহীন ল্যাম্পপোস্টে আমি গেঁথে দেবো লক্ষ সূর্য
ঘরে ঘরে ভালোবাসা, হাজার গোলাপ;
খোলামকুচির মতো যত্রতত্র দু’হাতে নক্ষত্র ছিটিয়ে ছিটিয়ে
এক নদী থেকে অন্য এক নদীর ভেতর দিয়ে
এক নারী থেকে অন্য এক নারীর ভেতরে গিয়ে
নৈঃশব্দ্য ধারণকারী অরণ্যের তালাচাবি নিয়ে
এক সূর্যোদয় ছেড়ে অন্য এক সূর্যোদয়ে গিয়ে
আমি তোমাকে দেখবো-- শুধু দেখবো তোমাকে...
যদি ভালোবাসা পাই
হে আমার মাতৃভূমি!
আমাদের মৃত্যুঞ্জয় মহান পিতার নামে
সকল মৃত্যুকে পরাজিত করে
শুধু একবার তোমাকে চুম্বন দেবো--
বার বার ভয় আর মৃত্যুকে উপেক্ষা করে
শুধু আর একবার তোমাকে চুম্বন দেবো
ও আমার প্রিয় মাতৃভূমি!
বার বার এই কণ্ঠে তুলে নেবো
বিজয়ের গৌরবের অবিনাশী জয়ধ্বনি : জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
পাহাড় কাটার পর
সে কবে জন্মের পর একদিন মাটির উপর
ভর করে দাঁড়ালাম আমি এক নগ্ন নরশিশু;
দক্ষিণে সমুদ্র রেখে সামনে দেখি সুউচ্চ পাহাড়
দিগন্তে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে হাত-পা ছড়িয়ে
নিখুঁটি মেঘের খাটে; আহা! এমন অপূর্ব দৃশ্য
যে না দেখে মারা যায় তার জন্ম বৃথা; দিবালোকে
যে আঁকে নির্জন পটে নানা মুখ কুমারী সন্ধ্যার
সে এক পাথর ভেঙে উঠে আসা পাকা তীরন্দাজ:
জগতে এমন কিছু দৃশ্য আছে চোখের আলোয়
কখনো যায় না দেখা—দেখতে হয় মনে দীপ জ্বেলে।
আস্থা কত পোক্ত হলে অন্ধ বরফের জুতো পায়ে
আগুনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে শূন্যের মহলে!
কে ছোটে শাবল হাতে ভেঙে দিতে পাহাড়ের ঘুম—
মৃত্যুর অদৃশ্য রূপে নীরবতা দেখে তার ছায়া:
কতটা গরিব আর বোকা হলে অক্ষম কাঠুরে
যে পাহাড়ে বাঘ থাকে সে পাহাড়ে কাঠ কাটতে যায়!
বাঘের রাজত্বে ঋষি ধ্যানে মগ্ন আয়েশি ভাষায়;
যে কাটে পাহাড় স্বপ্নে বাস্তবে সে দুঃখ চাষ করে—
পাহাড় কাটার পর ভেঙে যায় দুঃখের নীলিমা।
মরুভূমি স্বপ্ন দ্যাখে জল
দাঁড়াও নদীর জলে স্থির চিত্তে কিছুক্ষণ পর ঝড় উঠবে
মাঝি ও মাল্লার দল বৈঠা হাতে তুলে নেবে শেষ গান
বড় স্বাধ জাগে জন্মান্তরে কোকিলের আশা নিয়ে ভাষা নিয়ে
যাকে ভালোবাসি তাকে দেখে দেখে মরে যেতে চাই
যে মানুষ মরে নাই প্রেমিকের শ্রমিকের নিরন্তর গুপ্ত বাসনায়
দাঁড়াও বৈশাখী মেঘ রুমালের সঙ্গে তাকে অশ্বারোহী করো।
২.
নিঃসঙ্গ দুরন্ত মনে রুমালের ফুল ফোটে আর ঝরে যায়
কে তার হিসাব রাখে কে তাকে কুড়িয়ে রাখবে চুলের বেদীতে
জঙ্গলের জন্তুগুলো মানবের সঙ্গে তার মনীষাকে খায়
নারীশিশু অগ্নিদগ্ধ জনপদে হানা দেয় অশান্তির দানো
নাগিনী নদীর ঢেউয়ে ফণা তুলে গ্রাস করে রুমালের ঘুম
তবুও আশার তরী বেয়ে যায় প্রজন্মের সাহসী নাবিক।
৩.
অস্থির স্বপ্নের পায়ে অবিরাম বেজে যায় জলের নূপুর
মরুকে জড়িয়ে ধরে একা বহু রঙে উলঙ্গ বসন্ত নাচে:
হাওয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখি হাওয়া বসে আছে সুন্দরের চোখে
অবেলায় নতুন প্রেমের হাটে সে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে
যতই কুয়াশা তার অশুভ বর্বর থাবা হানে বৈশাখী মেলায়
নতুন রুমাল দিয়ে এ বুকে কুড়িয়ে নেব বসন্তের শেষ অস্তরাগ।
একটা অদৃশ্য মুখ
করোনার আগ্রাসনে যেন মৃত কবিতা সুন্দরী--
লাওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে আছে কাফন জড়ানো
পৃথিবীর হিমাগারে; মাছি ওড়ে দুর্গন্ধের টানে-
এতটা চাপের মধ্যে কে সে গায় জীবনের গানঃ
স্বপ্নকে বাঁচাতে গিয়ে আঁকড়ে থাকে মাটির বন্ধন।
কে এসে হাতের কাছে টেনে নেয় আকাশের হাত
যে-চোখে পাখির মতো কোনো ছায়া এখন ওড়ে না
সে-চোখ কবির নয়, এক আত্মবন্দী কয়েদীর
রঙ-রূপ-স্বপ্ন ছাড়া মানুষ কী করে বেঁচে আছে?
কবিতা কবিকে ছেড়ে চলে গেছে অন্যের বাসরে।
এ মনোটোনাস শূন্যতায় হঠাৎ কেন যে আজ
তাকে খুব মনে পড়ছে ; আহা! কতদিন মুখোমুখি
দু'জনে বসিনি খুব গাঢ় মৌনতার বেদীমূলে!
শরীরে শরীর জ্বেলে বাসনার মোমের আলোয়
জড়িয়ে ধরিনি তাকে কতদিন কতরাত ধরে!
মৃতের জানাজা শেষে ইচ্ছে হয় তাকে নিয়ে একা
কোথাও অনেক দূরে উড়ে যাই কুয়াশা কুটিরে
অন্ধকারে নক্ষত্রবীথির আলো কুড়োতে কুড়োতে;
কবিতাকে খুঁজতে গিয়ে বার বার কেন খুঁজে পাই
একটা অদৃশ্য মুখ-- যেন টাটকা পূর্ণিমার চাঁদ।
মানুষ তোমার নামে
না, আমি মৃত্যুর আগে ইঁদুরের চোখের ভেতরে
জীবন্ত ধানের ক্ষেতে না-বাঁচার ছাড়ব না আশা;
চাষার লাঙল হয়ে খুব ভোরে দক্ষিণের চরে
মাটিতে হৃদয় খুঁড়ে ঢেলে দিতে স্বপ্ন ভালোবাসা--
ছিটাবো গমের বীজ; ঝড় ঠেলে নদীতে উদ্দামে
নৌকো বেয়ে পাড়ি দেবো কল্লোলিত জলের পাহাড়;
স্রোতের বিরুদ্ধে যেতে যেতে দয়াল মুর্শিদ নামে
নতুন মরমি টানে আলীমের গানের বাহার
কণ্ঠে তুলে ছিঁড়ে দেবো আকাশের স্তব্ধ নীরবতা ;
যে-অামি মেশিন হাতে পরিয়েছি সভ্যতাকে জামা
তার হাতে কাজ আর গায়ে কুর্তা নেই! এ কী কথা!
এ লজ্জা কোথায় রাখি তার নেই মা- বাবা ও মামা!
না, আমি জীবন থাকতে এক বিন্দু পরোয়া না- করে
মানুষ তোমার নামে যুদ্ধে আছি স্ববন্দীর ঘরে।
জবাব দেবে না কেউ
এ অস্থির পৃথিবীতে আজ
শিশুরা আনন্দে নেই
ফুলেরা আনন্দে নেই
পাখিও আনন্দে নেই
নদীও আনন্দে নেই
চারিদিকে নেই নেই...
সবখানে দেখি শুধু আনন্দহীনতা
তার সঙ্গে যুক্ত আছে
খুন
হত্যা
লম্পটের আস্ফালন
ধর্ষিতার নিঃশব্দ বিলাপ।
আজ হরিণীর মাংস খেয়ে মানুষ গিয়েছে বনে
বাঘ কিংবা বাঘিনী শিকারে; মনে জাগে অদ্ভুত বাসনা
বাঘিনীর স্তন কেটে যদি খুঁজে পাওয়া যায়
মানুষের রক্তচিহ্ন ; হায়!
এতটা নৃশংস কেন আজ মানব প্রজাতি!
মানুষ যদি না হয় প্রকৃত মানুষ
তবে কি সভ্যতা বাঁচে?
আনন্দের লেশ মাত্র থাকে?
এ সবের জবাব কে দেবে? -- জবাব দেবে না কেউ--
মৃতদের জবান থাকে না।
তুমি চক্ষু খুলে দেখো
তুমি স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের সমুদ্রে যাও
জল থেকে জলের শীতলে
তুমি পাতা থেকে পাতার সবুজে যাও
অগ্নি থেকে অগ্নির দহনে
তুমি মাটি থেকে মাটির আঁধারে যাও
একা থেকে একার গভীরে-
তুমি সবখানে যাচ্ছো, যাও-একা
শুধু চক্ষু খুলে দেখো-সব অন্ধকার একা নয় ।
তোমার চুলের মতো কালো দীর্ঘ অন্ধকার চোখে নিয়ে
একা
আমি জেগে আছি
আগুনের মতো লকলকে অন্ধকার গায়ে নিয়ে
একা
আমি জেগে আছি
ঝর্ণার মতো বহমান অন্ধকার পায়ে নিয়ে
একা
আমি জেগে আছি-
ও অশ্রু
হাওয়াকে বললাম
তুমি থামো
হাওয়া হাওয়া হয়ে গেল;
বৃষ্টিকে বললাম
তুমিও থামো তো!
আহা! কতদিন ধরে মিস্টি মেয়ে বৃষ্টিকে দেখিনা
দৃষ্টির আড়ালে মেঘ জমে জমে বুক ভরা নদী
এটা কি কান্নার কোনো পূর্ব লক্ষণই, না
যন্ত্রণার পূর্বাভাষ?
পাহাড়ের আত্মা কেটে কেটে
আমার চোখের নিচে অন্ধকার অশ্রু বহমান
আমি এত করে বলি, অশ্রু -- ও অশ্রু! আমাকে তুমি
নরকে ভাসিয়ে নাও-- স্বর্গে গিয়ে কী কাজ আমার!
একটা মুখের জন্য
একটা মুখের জন্য এক জোড়া চোখের কী মরু তৃষ্ণা!
তৃষ্ণার শুকিয়ে যাওয়া সেই মৃত আকুল আকুতি
এখনও বহন করে পউষের এই মরা নদী :
আজ এতকাল পরে আমার কেবল কান্না পাচ্ছে
ফেলে আসা গাছগুলো কী নিবিড় ভালোবাসা দিয়ে
আমাকে জড়িয়ে রাখে কী মধুর নিমগ্ন নেশায়!
যে যাবার সে যাবেই পথ শুধু পথে রবে পড়ে
প্রিয় হলুদিয়া পাখি কেন ডাকে পাতার সংসারে?
ঐ শৈশব যেন এক হাবাগোবা দিগম্বর নদী;
পাড় ভাঙা যৌবনের বৃষ্টিময়ী প্রেমের উৎসবে
ময়ূর ময়ূরী নাচে ,খুলে যায় ভোরের জানালা;
যে তুমি নদীর মতো বাতাসের হাত ধরেছিলে
আমাকে উন্মাদ করে সে এখন পাহাড়ে উঠেছ--
তোমার ভেতরে যেতে কতবার পথে নামি-- পথ
চলে গেছে অন্যদিকে অন্য কারও গোপন খামারে।