top of page

ঈদ হোক মানবতার পথে সার্বজনীন আনন্দ উৎসব



খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়,চারদিকে কেমন একটা খুশির আমেজ।তাড়াতাড়ি মায়ের ঘরে উঁকি মেরে দেখি মা ব্যস্ত আছেন জর্দা সেমাই রান্নায়।বাবা,চাচা আর ভাইয়েরা সবাই গোসল সেরে গায়ে আতর মাখছে,নতুন পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত হয়ে এক্ষুনি ছুটবে জায়নামাজ হাতে ঈদগাহ ময়দানে। ব্যস্ত হাতে শুরু হয়ে গেলো ঘর গুছানো।লুকিয়ে রাখা ঈদের জামা টা কখন পরবো আর মুরুব্বিদের সালাম করে পাবো ঈদি বা সালামি এটা ভেবেই কাজের গতি আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়।তাছাড়া মেহেদী পরা,বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া,আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়ানো এবং সারাদিন ইচ্ছামতো খাওয়া ও আনন্দ করা ভাবতেই মন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ঈদ মানেই এমন সুন্দর চিত্র সবার ঘরে ঘরে।প্রতিটি মুসলিম পরিবারে ঈদ এমন করে অপার আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।ঘুচিয়ে দেয় সব ভেদাভেদ।

প্রাণের উচ্ছ্বাস, আবেগ সমষ্টিগতভাবে যখন পালিত হয় তখনই সেটা সার্থকতা পায়।মানুষের জীবনে উৎসব অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি মানসিক চাহিদা।উৎসব হতে পারে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা যে কোনো গ্রহণ যোগ্য বিষয় নিয়ে।তবে এক একটি উৎসবের একেক রূপ।দেশে দেশে বিষয় বৈচিত্র্যে,ভাষার ভিন্নতায় তাই উৎসব পালনের রীতি ও ভিন্ন হয়।বিশ্বের প্রধান যে চারটি ধর্ম বিরাজমান সেই সকল ধর্মেই উৎসব রয়েছে।এগুলো হলো ধর্মীয় উৎসব। আর এই ধর্মীয় উৎসবে শুধুমাত্র স্ব স্ব ধর্মাবলম্বীরাই পালন করলে ও এতে সম্পৃক্ত হয় অন্য ধর্মাবলম্বীরাও।মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা, খ্রিস্টান দের বড়দিন, হিন্দুদের দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য পূজা এবং বৌদ্ধদের জন্য বৌদ্ধ পূর্ণিমা। এই উৎসব গুলো প্রাত্যহিক জীবন যাপনের একঘেয়েমি দূর করতে বিশাল ভূমিকা রাখে।একটি জাতির স্বতন্ত্র পরিচয় নির্মাণ করতে এবং ঐক্যের চেতনা ও ভ্রাতৃত্বের মৈত্রী জাগ্রত করতে সম্মিলিত আনন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।।রসুল (সা:) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন, তখন সেখানে জাহেলী যুগ থেকে প্রচলিত দুটি উৎসবের দিন ছিলো। শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান। রসুল ( সা:) জিজ্ঞাসা করলেন," এই দুই দিন কিসের? " মদিনার সাহাবীরা বললেন," জাহেলি যুগ থেকে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা ও আনন্দ করি।" রসুল (সা:) বললেন,"আল্লাহ এই দুইদিনের বদলে তোমাদের নতুন দুটি উৎসবের দিন দিয়েছেন। ঈদ-উল - ফিতর ও ঈদ-উল -আযহা ( মুসনাদে আহমাদ ১৩০৫৮) " এভাবে মুসলমানদের পৃথক উৎসবের সূচনা হলো। এটা দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৪ খৃষ্টাব্দের ঘটনা। রসুল ( সা:) ঘোষণা করলেন,সব জাতির ই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে,এটা আমাদের ঈদ ( সহি বুখারী - ৩৯৩১) , সহি মুসলিম ( ২০৯৮)। এবছর সারা বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর পালিত হতে যাচ্ছে হিজরি সন অনুযায়ী শাওয়াল মাসের ১ তারিখ। ঈদ-উল-ফিতর একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হলো, রোজার ভাঙার দিবস।দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ধর্মীয় নিয়মানুসারে নতুন মাসের প্রথম দিনটিতে ঈদ পালনের মাধ্যমে সিয়াম সাধনা শেষ করা হয়। পরিবার পরিজন আত্মীয় বন্ধু প্রতিবেশী সকলের সাথে কোলাকুলি, নামাজ আদায়, ফিরনি, জর্দা, সেমাই সহ মজাদার খাবার এবং নতুন পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান ও বিতরণের মাধ্যমে ঈদ পালন করা হয়। ঈদ-উল-ফিতরে উল্লেখযোগ্য যে ধর্মীয় রীতিটি আছে, তা হলো ফেতরা প্রদান। এটি একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর

(ফিতরের যাকাত) বা সাদকাতুক ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ঈদের আনন্দ শুধু মুসলমানদেরই নয়, ধনী. দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে শান্তির মহান বার্তা- ঈদ মোবারক ।


- সাদিয়া নাজিব, সহযোগী সম্পাদক, শিকড়


96 views0 comments

Recent Posts

See All
bottom of page