top of page

ঈদের বিশেষ গল্প : সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর




আলি যখন কবি



মনটা ভালো নাই।

চারিদিক থেকে ক্রমাগত মৃত্যুর সংবাদ আসছে।

ইদানীং দেশ থেকেও মৃত্যু সংবাদ আসছে বেশি।কোভিডে।


রেস্টুরেন্টের ফ্লাটে,রুমে বসে,মন খারাপ অবস্থায়ই ফেসবুক ঘাটাঘাটি করছি।উদ্ভট মানুষের উদ্ভট ভিডিওর পাশাপাশি বড়ো বড়ো কবিদের শুদ্ধ সব কবিতার শুদ্ধতা বুঝার চেষ্টা করছি।

দুপুর দেড়টা।

আমার পাশের বেডের বাসিন্দা সেফ,নজরুল-তার মোবাইলে বরাবরের মতো ওয়াজ শুনছে।মাওলানা আজহারী সাহেবের।সে ওনার অন্ধ ভক্ত।

কি জানি এক ওয়াজ করে উনি বিতর্কিত হওয়ার পর থেকে নজরুল ভীষণ ক্ষিপ্ত।দেশের সরকারের উপর।শেখ হাসিনার উপর।

আজহারী সাহেব ওয়াজ করেন মোবাইলে আর নজরুল ওয়াজ করে আমার পাশের বেডে শোয়ে আপন মনে--সে শেখ হাসিনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে-তার নিজস্ব ওয়াজের মাধ্যমে।

নজরুলের ওয়াজ যখন আমার অসহনীয় পর্যায়ে-ঠি ক তখন দরোজা দিয়ে আরেক অসহনীয়,আলির মাথা দেখা দিলো।

আমি প্রমাদ গুনলাম।

- কি করো বাবর ভাই?

দুই মাওলানার ওয়াজে ত্যক্ত বিরক্ত আমি বললাম,

- ওয়াজ করি,ওয়াজ!

- হে হে হে।

আলি তার সব ক’টা বিশ্রী দাঁত বের করে,তার বিশ্রী হাসি হাসতে হাসতে এসে আমার বেডের একপাশে বসলো।

জিজ্ঞাসা করলাম,

- তুই এখন কি চাস?

- তোমার ওয়াজ শোনতে চাই।শ্রোতা ছাড়া ওয়াজ জমে?


ব্যাটা ফাজিল!

বসেছে আমার পায়ের দিকে।অনায়াসে লাথি মারা যায়।দেবো নাকি একটা লাথি বসিয়ে?

অনেক কষ্টে নিজের অন্যায় ইচ্ছাটাকে সংবরণ করে বললাম,

- যে জন্যে এসেছিস সেটা শেষ করে প্রস্থান কর।নইলে আমি বিরাট একটা পাপ করে বসবো।

আলি হাসতে হাসতেই বললো,

- পাপ ছাড়া পুণ্যের কাজ কিছু করেছো তুমি কোনোদিন?


বলে কি এই ফাজিল!

নাহ,লাথিটা বসিয়েই দেই এবার।

আমি পা তুলার আগেই আলি উঠে এসে তার মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

- এটা একটু পড়োতো বাবর ভাই।


পায়ের পাপে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আলি তার মোবাইলটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।

মাঝে মাঝেই ইংলিশ কোনো মেসেজ বুঝতে না পারলে আমার কাছে নিয়ে আসে সে।

জিজ্ঞাসা করলাম,

- কিসের মেসেজ?এটি তো দেখছি বাংলায়।

- মেসেজ না তো।একটি কবিতা।

- কার কবিতা?

আলি বড়ো করে হাসলো।

- আমার কবিতা।এই মাত্র লিখেছি।


বিস্ময়ের চোটে আমি বিষম খেলাম।

আলি জিজ্ঞাসা করলো,

- কি হলো বাবর ভাই,ঠিক আছো তো?

নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম,

- তুই কবিতা লিখতে পারিস জানতাম না তো!

আলি বললো,

- ফেসবুক খুললেই দেখি কবিতার ছড়াছড়ি।ঐ সব পড়ে পড়েই কবিতা লেখা শিখে গেছি।তোমার মতো জ্ঞানীরা বলেনা-লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হয়?আর তোমার জানার কথা বলছো?বছরের পর বছর কাছাকাছি থাকার পরও মানুষ কি পরস্পরকে সম্পূর্ণ জানতে পারে?


বাব্বা,কী উচ্চ মার্গের কথা বাত্রা আজ আলির মুখে!

বললাম,

- তা তোর কবিতা নিয়ে আমার কাছে কেনো?

- হে হে হে,তুমি কবি মানুষ,কবিতা নিয়ে তোমার কাছে আসবো নাতো সেফ নজরুল মিয়ার কাছে আসবো?


ভেবেছিলাম অপমান জনক এ কথা শোনে নজরুল একটা শক্ত ধমক লাগাবে।কোথায় কি!

চেয়ে দেখি সেও তার সব ক’টা দাঁত বের করে হাসছে!

বললাম,

- আমি কোনো কবি না আলি।কবি অনেক বড়ো ব্যাপার।কবিতা লেখাও এতো সোজা না।এতোটা বছর ধরে কবিতার ‘ক’টাই ধরতে পারলাম না।আর তুই আমাকে কবি বলছিস!

- তুমি যে লিখো ওগুলো তবে কি?

- কিছুই না।

- মানে?

- মানে হচ্ছে আমি যা লিখি ওগুলো কবিতার পর্যায়েই পড়েনা।অনেকেও তা বলেও।

আলি বললো,

- বাদ দাও তোমার নিজের কথা।এখন আমার কবিতাটা পড়ে বলো কেমন হয়েছে।


আলিকে যতো তাড়াতাড়ি রুম থেকে বিদায় করা যায়-ততোই শান্তি।

আমি তার কবিতা পড়তে শুরু করলাম।

‘বর্ষাতে বৃষ্টি ঝরে

শীতকালে কুয়াশা পড়ে

পূর্ণিমায জোৎস্না হয়

অমাবস্যা অন্ধকারময়....’

বললাম,

- সুন্দর কবিতা হয়েছে আলি।

সে অবিশ্বাসের স্বরে বললো,

- সত্যি বলছো?

- সত্যি বলছি আলি কবিতা সুন্দর হয়েছে।’বর্ষাতে বৃষ্টি ঝরে/শীতকালে কুয়াশা পড়ে’ সত্য জিনিষ কী সহজ ভাবেই না তুই ফুটিয়ে তুলেছিস!অসাধারণ আলি।জানিস অনেক বড়ো বড়ো কবির তথাকথিত ‘শুদ্ধ’কবিতা পড়ে আমি আগা মাথা কিচ্ছু বুঝি না। তোর কবিতা আমি পড়েই বুঝতে পারছি।চোখের সামনে বৃষ্টি আর জ্যোৎস্না দেখতে পাচ্ছি।আমি সিরিয়াস ভাবে কথাগুলো বললাম।

আলির খুশি ভরা মুখ দেখেই বুঝতে পারছি-কথা গুলো সে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছে।

সে তার মোবাইলটা নিয়ে উঠতে উঠতে বললো,

- আজ রাতে তো আবারো চিকেন কারী বাবর ভাই,তুমি খাবে কি?তুমি তো আবার চিকেন খাওনা।

- বানিয়ে নেবো কিছু একটা।

- হে হে হে,আমি থাকতে তুমি বানাবে কারী!আমি আছি তবে কি জন্যে?আজ আমি তোমাকে কিংপ্রণ ঝাল-ফ্রাই বানিয়ে খাওয়াবো।

খুশিতে ডগমগ আলি যেনো উড়তে উড়তে আমাদের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

যাক, ‘কি খাবো’ ‘কি খাবো’বলে আজ থেকে আমাকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না!

40 views0 comments
bottom of page