রাসেল, আমার বন্ধু
শ্রাবণের শেষ রাত, সেদিন আমি ঘুমিয়ে আছি
প্রতিরাতের মত রাসেলও ঘুমিয়ে
আমরা পাখিডাকা সুন্দর একটা ভোরের স্বপ্ন দেখছি
আমরা তখন রাজনীতি বুঝতে শিখিনি
আমরা জানিনা খুনি, আততায়ী আর বিশ্বাসঘাতক শব্দের মানে কি?
আমরা শুধু শিখেছি; জয়বাংলা একটি নির্মল শব্দ, একটি মন্ত্র
আর কিছুই জানিনা, আর কিছুই শিখিনি।
সেদিন ভোর হয়েছে বিক্ষুব্ধ বাতাসে রক্তের গন্ধশুঁকে
সেদিন ভোর হয়েছে অজস্র পাখিদের কান্নার মাতম শুনে
শীতলক্ষ্যায় বইছে রক্তের নহর, বঙ্গোপসাগরে উত্তাল ঢেউ
আকাশচুম্বী বজ্রকন্ঠ বিমূর্ত, উদাসীন!
বাংলাদেশের রক্তাক্ত মানচিত্র নুয়ে পড়েছে
বত্রিশ নাম্বারের সিঁড়িতে
তবুও ছাপ্পান্নহাজার বর্গমাইলজুড়ে
ঊর্ধ্বাকাশে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী।
আমি মাত্র তৃতীয় শ্রেণীর স্কুলবালক
রাসেল চতুর্থ, আমরা খুব কাছাকাছি
অলীক বন্ধনে একাত্মা, একজন্মে বেড়েওঠা যুগলবন্ধু
আমরা তখনো রক্ত দেখিনি, রক্তের রঙ দেখিনি
তখনও আমরা হাফপেন্ট পরা নাবালক,
কুয়াশা জড়ানো কোমল শরীর
চাঁদের দেশে চরকা বুড়ির গল্প শুনার বয়স.
নাস্তার প্লেটে চিনিতে ডিমের কুসুম।
আমরা ছিলাম বন্ধু,
আজ বিচ্ছিন্ন, পলাতক নিঃসীম আত্মা।
সেদিন শ্রাবণের আকাশ থেকে ফিনকি দিয়ে
ঝরে পড়ছিলো রক্তবর্ষণ,
আজো আমি শরীর থেকে মুছতে পারিনি রক্তের দাগ
আজীবন আতংকিত শ্রাবণ রাতের রক্তজলে!
ঘরে ফেরার তাগাদা নিয়ে আমি এখনো পলাতক,
ছুটে বেড়াচ্ছি রাসেলের আত্মার সন্ধানে।
আমরা ছিলাম অলীক বন্ধনে যুগলবন্ধু
আমরা ছিলাম বাংলাদেশ, অখণ্ড শরীর।