top of page

স্মরণ : ২২ শ্রাবণ



আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে

ভোরের আলো মেঘের ফাঁকে।


এমন করেই চির বিদায়ের ব্যথা গুঞ্জরিত হয়েছে রবি ঠাকুরের অন্তরে। মহাকালের চির সত্য যে পথ সেই প্রস্থান পর্বে একদিন তিনি পা রাখলেন। হাহাকার ধ্বনিত হলো দিকে দিকে। বৃক্ষে,লতায়, ঘাসে পুষ্পে,জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ছড়িয়ে পড়লো শেষ যাত্রার ব্যথা। সেদিন ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে দেহ রাখলেন কবি। পেছনে রেখে গেলেন তাঁর কর্ম এবং ইতিহাস। গল্পে, গানে,কাব্যে, প্রবন্ধে, নাটকে কোথায় তিনি নেই! চিহ্ন এঁকেছেন সোনার হরফে। কি তীব্রভাবে তিনি আমাদের জীবনে আদর্শে মননে দৃঢ়ভাবে বসে আছেন। আত্মার শুদ্ধতা মিলে যায় বাণীতে। মন মজে যার সুরে সেই প্রবাদ পুরুষ কাঁদিয়ে চির বিদায় নিলেন বাইশে শ্রাবণ।


শ্রাবণের ধারাপাতের সাথে মিশে একাকার হলো প্রতিটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অন্তর। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন যেতে হবে সবাইকে। সেই কষ্টের প্রকাশ, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে আমি বাইবো না, আমি বাইবো না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে। কালোত্তীর্ণ এই সুর যুগ যুগ রবি ঠাকুর কে বাঁচিয়ে রাখবে, জাগ্রত রাখবে প্রজ্বলিত শিখাটির মতো। মৃত্যুকে পরম বন্ধুর মতো আলিঙ্গন করেছেন। সকরুণ বেদনায় লিখেছেন,

মরণ রে,

তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান!

মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট,

রক্ত কমল কর, রক্ত অধর পুট,

তাপ বিমোচন করুণ কোর তব,

মৃত্যু অমৃত করে দান!

তুহু মম শ্যাম সমান।


কবি গুরুর লেখায় মিশে আছে আধ্যাত্ম চেতনা ও বোধ। জীবনের সৌরভ যেমন ছড়িয়ে আছে তাঁর লেখনীতে তেমনি জীবনের ওপারে আরেকটি অদেখা অধ্যায়ের আভাস খুঁজে পাই। স্রষ্টার আরাধনা, প্রেম,পূজা, নৈবেদ্য কবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন সাহিত্যের পরতে পরতে। সাহিত্যে নোবেল জয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলা কে বিশ্বময় পরিচিত করেছেন। অর্জন করেছেন বিশ্ব কবির রাজ মুকুট। যত দিন বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে ততদিন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির মনে বেঁচে থাকবেন।


২২ শ্রাবণ কবি গুরুর আক্ষরিক অর্থে প্রয়াণ দিবস হলে ও তাঁকে এই দিন টি তে স্মরণ করে আমরা আমাদের অন্তরে রবি ঠাকুর কে জাগ্রত করে তুলি।


চির বিদায় তোমার জন্য নয়

যেতে নাহি দিবো হায় তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়।


সাদিয়া নাজিব

সহযোগী সম্পাদক, শিকড়

55 views0 comments
bottom of page