প্রতিহত সময়
আমার উঠোন ভাঙা সরোবরে
আমি যখন অবগাহন করি,
ভুলে যাই-
ঠিকানা নিশ্চিহ্ন করা
নির্মম এই তটিনীর কথা।
ভাঙা জানালা গলে যখন
ভোরের আলো
স্পর্শ করে চোখের পাতা
হঠাৎ জেগে উঠি আমি
ভুলে যাই-
আমার আধাস্বপ্নের
সুখময় ঘুমের বেদনা।
কোন রৌদ্রপোড়া ঘূর্ণি যখন
আমাকে করে ধূলিময় আলিঙ্গন ,
ভুলে যাই-
শরীরের নিদারুণ কষ্টময় যন্ত্রনা।
সারাদিনের ক্লান্ত দেহের উপর
যখন সন্ধ্যা আঁধার নামিয়ে দেয়
তখন দেখতে পাইনা কিছুই
নির্ঘুম রাত আমাকে
আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ,
আমি হয়ে যাই-
অভিশপ্ত কোন অতৃপ্ত আত্মা ,
কথা না রাখা সময়ের কাছে
অবহেলিত, পরাজিত
এক ক্ষুদ্র মানুষ ।
জোয়ার
একদিন মেঘের ঘ্রাণ
ছুঁয়ে দিল বৃষ্টির শরীর
ভিজে গেল কাশবন ,
তপ্ত বালিয়াড়ি ,
জ্যোৎস্নার বসন ।
নাওয়ের গলুই ডুবিয়ে
এলো নতুন জোয়ার
জলতরঙ্গে নাচে
উন্মত্ত অভিসার
মাঝরাতের ঘুমভাঙা নিঃশ্বাসে
অচেনা কাঁপন
আঁধারের গা হাতড়িয়ে
খুঁজে ফেরে নিশাচর ওম ।
পর্যায়বৃত্ত
গভীর নিশীথে পাড় ভাঙা শব্দে
একবার দেখা হয়েছিল
উত্তাল নদীর মোহনায়,
করজোড়ে অনুরোধ ছিল
একসাথে চলার!
মাতাল স্রোত
তীক্ষ্ণ নজর হেনে
ছুটে চলে সমুদ্র মন্থনে,
স্রোতের ঘূর্ণিতে ডুবে যায়
আমার ভাটার টান।
কারণে-অকারণে
গল্প শোনার বায়না ছিল
গৃহশিক্ষকের নিকট
বিরক্ত গৃহশিক্ষক,
রূপকথার এমন রাজ্যে
বিচরণ করিয়েছেন যে,
এখনো অশরীরী শঙ্কায়
ঢিপঢিপ করে প্রাণবায়ু,
দেহের ছায়ায়
আঠারমত লেগে থাকে
ভৌতিক আতংক।
যে ভালোবাসা পুষে হয়েছি বিবাগী
সেই ভালোবাসাই
মুঠো মুঠো জ্বলন্ত
চুনগুঁড়া ছিটিয়ে দিয়েছে
চিবুক বরাবর,
অন্ধত্বের সাদা লাঠি
হয়েছে পথের দিশা
অন্ধকার কুটিরে
একাকিত্ব বসবাস।
তবুও দূর বনের
শুকনো পাতার অনুরণন
সুর ভাঁজে মনের সেতারে,
লালগিরির গা ঘেঁষা পদশব্দ
জাগিয়ে রাখে
ঘুমন্ত চোখের পাপড়ি,
নীল আকাশে উড়বার সাধ
জড়াজড়ি ঘুমায় মাটির পালঙ্কে,
অচেনা কেউ
হাতছানি দেয়
দরজার ওপারে
লুটে নিতে চায় দুঃখময় বিষাদ !
জীবনচরিত
প্রতিদিন ঝড়ের তাণ্ডব
রেখে যায় অজস্র জলের ফোঁটা
বানের স্রোতে
ভাসে ভিটে-মাটি শিথানের বালিশ
চাল-ডাল আর নুনের হাঁড়ি।
অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ খুঁজতে
হেঁটে চলি জলধি বরাবর,
শরীরে আঁটা ভেজা স্যাঁতসেঁতে বসন
উচ্ছ্বসিত অশ্রুর প্রসব বেদনায়
রক্তাক্ত জরায়ু
দমকা হওয়ায়
নিভুনিভু করে প্রাণপ্রদীপ
বারবার টেনে ধরি আয়ুর সুতো।
খুব ছোট একটা ইচ্ছা পূরণের সংকল্প
বহুদিনের
নিভে যাওয়ার তাই বড্ড ভয়।
কিন্তু, হায়!
করতল আড়াল করে
আর কতক্ষণ বাঁচা যায়?
কাদাজলে ডুবে মরতে মরতে
তবুও ঘুড়ির নকশা বানাই,
একদিন আকাশ ছোঁব
তোমাকে দেখতে যাব।
এবং বেঁচে থাকি
অতঃপর ...
বৃন্ত থেকে খসে পড়ে শুষ্ক পাপড়ি
কেন্দ্রে ঝুলে থাকে আজীবন বৈরাগ্য,
নৈরাজ্যের দাবানলে জ্বলে পুড়ে খাক
বর্ষাদুপুর
বুনোঘাসে সয়লাব আত্মিক আঙিনা,
নির্জন প্রহরে আত্মাহুতির হিড়িক পড়ে
শব্দগুচ্ছের,
মুষলধারে বৃষ্টি নামে শূন্য চাতালে
ভিজে যায় সূর্য,
ভিজে যায় স্নানঘরের গুনগুন
ভাটিয়ালি সুর,
ক্ষুদ্র এক নুড়ি পাথরের আঘাতে
নড়ে যায়
তাবৎ ঝিলের শান্ত জল
ঢেউ খেলে সহস্র কথনের বিন্যাস,
পড়ন্ত বিকেল মিলায় সন্ধ্যার কোলে
পুরোনো পুঁথির পাতায় পাতায়
হেঁচকি টানে ধূমায়িত প্রহর,
তবুও উঁকি দেয় আবছা ভোর;
এবং বেঁচে থাকি!