top of page

শুভ জন্মদিন কবি নাজনীন খলিল

Updated: Nov 8, 2021



কবি নাজনীন খলিল সত্তর দশকের প্রগতিশীল এবং সৃজনশীল কবি প্রতিভা নাজনীন খলিল। কবিতায় সহজ শব্দব্যবহার এবং গদ্যছন্দে তিনি সব সময় সাবলীল। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়ে কবি তাঁর কবিতার নিজস্ব বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। রূপক, চিত্রকল্প বা অতীন্দ্রিক বিষয়ের চেয়ে বাস্তবতার প্রাধান্য পেয়ে থাকে অতিমাত্রায়। তাঁর কবিতায় ব্যতিক্রম হচ্ছে তিনি সহজ ও সারল্যকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন এবং পাঠকের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাবার সম্ভাবনার পথ তৈরি করতে পেরেছেন। কবির জন্ম ৬ নভেম্বর, ১৯৫৭ সালে সিলেটে। বেড়েওঠা এবং কর্মক্ষেত্রের অবস্থান সিলেটে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখির শুরু। বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি রেডিও বাংলাদেশ সিলেটের একজন নিয়মিত কথক, গ্রন্থক এবং উপস্থাপক ছিলেন দীর্ঘদিন।কবির এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাথরের সাঁকো, বিষাদের প্রখর বেলুনগুলো, ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ, একাত্তর দেখবো বলে (ব্রেইল, যৌথ), গুপ্তধানুকী অথবা মাংসবিক্রেতা ইত্যাদি।

শিকড়ের সাথে তিনি দীর্ঘদিন যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে শিকড় ও গ্লোবাল পয়েট গ্রুপে এডমিন হিসাবে সম্মানিত দায়ীত্ব পালন করছেন। কবির জন্মদিনে শিকড় পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।



নাজনীন খলিলের কবিতা

 

অশ্রুত সুর

তোমার আয়না অথবা জলবিম্বে নক্ষত্রের কোলাহল ;

হাতের তালু থেকে এক নদী বিষাদ গড়াতে গড়াতে

মিশে গেছে সমুদ্রের নুনে।

রাত দ্বিপ্রহরের ঘণ্টায় বেজে ওঠে নীলভায়োলীন

নীরবতার বাদামী খাম ছিঁড়ে

ইথারে ছড়িয়ে পড়ে

কালোগোলাপের তমসারণিত পাপড়িগুলো।

শব্দ ভাঙ্গছে

ভাঙ্গতে

ভাঙ্গতে

খুঁজে ফিরছে নতুন কোন বাক্যগ্রন্থি।

তার চেয়ে একটা ঝড় উঠুক প্রবল সামুদ্রিক

একখণ্ড সমুদ্রই নাহয় ছিটকে উঠুক

ছড়িয়ে পড়ুক আকাশের পিঙ্গল অলিন্দে ।

তরঙ্গচূড়ার উত্তুঙ্গে কেঁপে ওঠে সশব্দ বর্ণমালা

উড়ুক্কু মাছের ঠোঁটে ঠোঁটে তারা সব

পৌঁছে যাবে মেঘের কানে কানে ; গোপন চিঠির মতো।

চাঁদের পতাকাতলে বেজে গেল

অশ্রুত সানাই।


 

ল্যান্ডস্কেপ উজ্জ্বলঅনিন্দ্য সব ল্যান্ডস্কেপ থাকে শুধু স্বপ্নের ভেতরে তুমি জানো তোমার দেয়ালে পুরোটা ঝুলবে নাকি এক খণ্ডাংশ। শূককীট থেকে বেরিয়েই উড়ে যাচ্ছে প্রজাপতি গাছের বাকলে ফেলে যাচ্ছে কালো তার ছায়া এবং একটি খোলস। ডানায় কোন রঙ স্থির হবে সেটা অন্য প্রশ্ন; আলাদা। কিন্তু এইযে হুট করে খুলে দিলে রোদের বোতাম ছায়াটা কোথায় রইলো? ছায়ার পেছনে ছায়া তার পেছনে. কাসকেটে জমিয়ে রেখেছি ধুলোছাই।

 

পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি বিমুগ্ধ আবেশ কেটে গেলে শরাব মিথ্যে হয়ে যায় তবু লালপানির পেয়ালা হাতে বসে থাকি; জীবন দোল খাচ্ছে অবিরত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো। এখনো এ ঘরের সব কোন ছেয়ে আছে শেষ বিকেলের সুরভি-মদিরা এখনো মুছেনি তানপুরার শেষ ঝংকারের রেশ গোধুলীর কনে দেখা আলোর ঘেরে ফুটি ফুটি সন্ধ্যামালতী আকাশে পাখসাট বাজে.. বিহঙ্গম ফিরছে কুলায়; নিষ্প্রাণ স্ট্যাচুর মতো এক জোড়া মানব-মানবী নির্বাক।ওদের সব কথা শেষ হয়ে গেছে। তুমি তো জানতে... চাঁদের কতটা গভীরে গেলে স্পর্শ করা যায় চরকাবুড়ির সুতো আমাদের জন্য বাকী ছিল আরো এক তৃতীয়াংশ পথ। ফিরে আসা যথার্থ ফিরে আসা হয়না আর বারবার ভুল হয় প্রত্যাবর্তনের অলিখিত শর্তগুলো অমলিন আঁকা থাকে পদযাত্রার ছাপ;

 

দাগ থাক। এই দাগ। বোতল উপচে পড়া তরল আনন্দচিহ্ন। বাতাসে মিলিয়ে গেলে ঘ্রাণ তলানিতে স্মৃতিঅভিজ্ঞান ফুটে থাক আরো কিছুটা সময়। ফুল টেনে নিচ্ছে প্রাণপণ গন্ধ, বাতাসের। মলয়ার অণুতে অণুতে ভিন্ন সুর বেজে গেলে রঙ বদলে যায় বারবার তা কি জানে বোকাপুষ্প? রঙ পেন্সিল হাতে দাঁড়িয়েছি নোনাদেয়ালের পাশে।

 

বিঁধে আছে তীর এবং ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো পায়ে বিঁধে গেছে ভাঙ্গা কাচের টুকরো রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে ড্যান্সফ্লোরে … নাচঘরে কেন এমন ছড়িয়ে দিয়েছো চূর্ণকার, পাপড়ির নীচে গোলাপের কাঁটা? আমারতো জানাই ছিল পারশিগালিচার নীচে। রক্ত এবং কাচের টুকরো ; দুটোই লুকনো যায়। রোজ ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি সমস্ত শরীর জুড়ে বিঁধে আছে ঈর্ষার ছোট ছোট তীরগুলো। যখন বিভোরঘুমে বুকের ভেতরে পাখি, প্রজাপতি আর ঘাসফুল তুলে রাখি; কেউ ভালবেসে দিয়ে যায় তীরউপহার। ইদানীং খুব সচেতনে মানুষের ভাঁজকরা মুঠোর দিকে তাকিয়ে দেখি কখন কোন ফাঁকে গুপ্তনখরগুলো বের হয়ে আসে।


 

bottom of page